দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলো ডিপিও কাজ করছে। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা যা
আমরা চিহ্নিত করেছি তা হচ্ছে ডিপিও সমূহ সেলফ হেলফ নয় এবং প্রত্যেকের নিজস্ব
সংবিধান অনুসারে সাধারণ পরিষদ সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, কিন্তু বাস্তাবে তা নেই। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করার পর
এবং দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বুঝা যাচ্ছে যে ডিপিওদের সেলফ হেলফ অবস্থায় আনার জন্য বিশেষ
কর্মসূচী নির্ধারণ করা দরকার। প্রতিবন্ধী কমুনিটির অনেক সংগঠন এই ধারণার সাথে এই
ভেবে একমত হবে না এবং বিশেষত ডিপিও সমূহের নির্বাহী কমিটিগুলো হয়তো এসব প্রস্তাব
আমলেই নিবেনা এ জন্য যে এতে কমিটির কিছুটা স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। প্রতিবন্ধী
কমুনিটির বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে হলে কমিটির স্বার্থ কিছু ক্ষতিগ্রস্থ
হবেই। এসব তিক্ত কথা না শুনতে চাইলে, রেজাল্ট হবে তথৈবচ, যেভাবে আমরা গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় কাজ করে আসছি। তাতে এইসব
প্রজেক্ট প্রপোজাল, সরকারী, বেসরকারী, জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘ আয়োজিত সেমিনার বা ওয়ার্কশপ
কনফারেন্স সমূহ সত্যিকারে কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেনা। এত দলিল, আইন বিধিমালা থাকার পর ডিপিও সংগঠন গুলোকে সেলফ হেলফ
সিস্টেমে আনা যাচ্ছে না এবং ডিজেবল্ড কমুনিটির একটা বিরাট সংখ্যক সদস্য ডিপিওদের
সহযোগীতার বাহিরে পড়ে আছে। বিপন্ন মানুষদের কথা বাদই দিলাম। ডিপিও আছে অনেক, কিন্তু অধিকাংশই তেমন উল্লেখযোগ্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে
পারছেনা। কোন কমিটিতে প্রতিবন্ধী কেউ নেই, কিন্তু নামকাওয়াস্তে প্রতিবন্ধীদের পিতা, মাতা, বা আত্মীয়
স্বজন আছে দেখিয়ে ডিপিও গঠন করা হচ্ছে। এভাবে গঠন করা হচ্ছে আর কি। কিন্তু যাই হোক, যদি সেলফ হেলফ ও শক্তিশালী ইফেক্টিভ করতে হয় তবে প্রথম
পদক্ষেপ হবে সাধারণ পরিষদে কমপক্ষে ৬৬% ডিজেবল্ড পারসন থাকবে, কার্যনির্বাহী পরিষদে কমপক্ষে ৯০% এবং প্রতিষ্ঠানের মূল
ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডার ১০০% ডিজেবল্ড হবেন । সাধারন পরিষদে অপ্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির
সর্বোচ্চ ৩৩% প্রতিনিধিত্ব থাকতে পারে, কারণ সাধারণ জনগোষ্ঠির একটা প্রতিনিধিত্ব
মূল কার্যক্রমে থাকা দরকার এবং অপ্রতিবন্ধী বিপন্ন মানুষদের এখানে ইনক্লুড করা
দরকার। কিন্তু তা মূল দায়িত্বে নয়। অর্থাৎ মূল দায়িত্ব যেমন সভাপতি / চেয়ারম্যান /
প্রেসিডেন্ট, সাধারণ সম্পাদক /
নির্বাহী পরিচালক ও অর্থ সচিব / ফিন্যান্স সেক্রেটারী পদে নয়। এই পদ সমূহ অবশ্যই
কোন ভাবেই অনির্বাচিত হবে না। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ন পদে কিভাবে অনির্বাচিত লোক
দিয়ে অনেক ডিপিও চলছে তাতেই বুঝা যাচ্ছে যে এসব আসলে ব্যক্তিগত সংগঠন হয়ে
দাঁড়াচ্ছে, কমুনিটির বৃহত্তর স্বার্থে কাজে আসছে না। বাংলাদেশে খুব সামান্য ইফেক্টিভ ডিপিও সংগঠন আছে, ডিপিও সংগঠন হয়তো দুইশ / আড়াইশ এর বেশি হবে। এদের ভূমিকাতে প্রতিবন্ধী
কমুনিটি ব্যাপক ভাবে তেমন একটা উপকৃত হচ্ছে না। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক ভাবে
সম্পৃক্ত হচ্ছে মাত্র।
ডিপিওর গঠন কাঠামো যেরকম হওয়া উচিত : (১) জিসি ও ইসিতে অন্তত ৯০ ভাগ ডিপি থাকা, (২) ৩ জন
ব্যাংক সিগনেটরি সকলেই ডিপি হওয়া, (৩) একটি লোকাল ডিপিওর
কর্মকান্ড ঐ অঞ্চলের সকল অংশ কভার করবে এবং প্রতিবন্ধী কমুনিটির শত ভাগ সদস্য
বেনিফিশিয়ারি হিসাবে ইনক্লুড হবে (যদি ঐ এলাকায় অন্য ডিপিও না থাকে), (৪) সকল সভায় কমপক্ষে ৬৬% উপস্থিতি থাকবে। (৫) মাদার একান্টস
এন্ড অব প্রজেক্ট একাউন্টস আপ টু ডেট এন্ড প্রপার (৬) ন্যাশনাল ডি পি ও কোয়ালিশন বা এলায়েন্স এফিলিয়েশন, (৭) সেলফ হেলফ গ্রুপ সিস্টেম এবং নির্বাচিত টিম লিডার (৮) বিপন্ন
জনগোষ্ঠির অন্তর্ভূক্তি, (৯) অনুদানের উপর অত্যধিক নির্ভরশীল না হওয়া, (১০) নির্বাহী কমিটির উপর সাধারণ পরিষদের বাস্তব নিয়ন্ত্রণ থাকা, কাগজে কলমে নয়। (১১) সদস্যদের সপ্তাহ বা মাস ভিত্তিক নিয়মিত
উপস্থিতি। (১২) অনুষ্ঠান নির্ভর না হয়ে সেলফ হেলফ কার্যক্রম নির্ভর। (১৩) সভাপতি /
চেয়ারম্যান / প্রেসিডেন্ট সব ডিপিওর যে কোন একটাই পরিভাষা হওয়া উচিত। যেমন হয়
সাধারণ সম্পাদক / জেনারেল সেক্রেটারী নাহয় মহাসচিব ১৪। জাতীয় সংঘের সি.আর.পি.ডি র
সব ধারা না জানলে কার্যনির্বাহী পরিষদে যেন কাউকে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়- নীতিমালা
করা। (১৫) নির্বাহী পরিচালক এর ক্ষমতা সীমিত হবে এবং তিনি নিয়মিত আয় ও নিয়মিত অফিস
করবেন, এর বাহিরে কোন অর্থ উপার্জন বা পেশা নিতে পারবেন না ইত্যাদি।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা সহায়ক বিশেষ প্রকল্প : ইনক্লুশান অব দা ভিউজুয়ালি ইমপায়ারড পারসনস ইন দা জেনারেল এডুকেশন সিস্টেম
এন্ড পাবলিক প্রাইভেট সার্ভিস। উক্ত প্রকল্পে বিশেষ ভাবে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে
বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হবে নিম্নোক্ত ভাবে (১) শিক্ষা উপকরণ নিশ্চিত করা,
ব্রেইল অথবা অডিও ম্যাটারিয়ালসের মাধ্যমে। এজন্য একটা কাজ হচ্ছে সার্ভে করে তালিকা
আপডেট করা। ২। স্বতন্ত্র যানবাহন নিশ্চিত করা। কোম্পানী অথবা সরকারী সহয়তায়।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য পাবলিক বাসে ৩টি সিট প্রদান আসলে কোন কার্যকর হয় না।
তারা চলমান গাড়ীর নাগাল পায়না বা তাদেরকে ইচ্ছাকৃত ভাবে উঠানো হয় না। (৩) পরিপুর্ণ
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নির্ধারিত ভাতা মাসে ৫ হাজার টাকা নির্ধারন করা (যাদের
চাকুরী বা ব্যবসা বা কোন স্থাবন সম্পত্তির আয় নেই শুধু তাদের জন্য)। (৪) আংশিক
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রচলিত ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত
করা। (৫) উচ্চতর লেভেল, কলেজ লেভেল, স্কুল লেভেল, প্রাইমারী লেভেল এ অধ্যয়নরত সকলের পৃথক তালিকা যাচাই করে
প্রত্যেকের অবস্থা জানা ও সহযোগীতায় আওতায় নিয়ে আসা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মধ্যে
কারা শিক্ষায় আগ্রহী কিন্তু বঞ্চিত তা সনাক্ত করা। (৬) অনুদানের উপর নির্ভর না
থেকে শিক্ষার দিকে আসতে এওয়ার করা। (৭) দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সরকারী ও বেসরকারী
চাকুরীতে অন্তর্ভূক্ত ও সিস্টেম ডেভেলাপ করা। (৮) বাংলা ব্রেইলের আরো উন্নতির জন্য
বিশেষ গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়া।
ভূমি প্রকল্প : সাসটে-নেবল ল্যান্ড টেকনোলজি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে এর আয় থেকে
প্রতিবন্ধী, বিপন্ন মানুষ, নারী শিশু, বৃদ্ধ সকলকে এর সহযোগীতার আওয়াত নিয়ে আসার
পরিকল্পনা থাকতে হবে। বিশেষত সকল পরিপূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও পথশিশুদেরকে পুনর্বাসিত করা। কারণ
তারা সবচেয়ে অবহেলিত। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারী কারীগরি ও তথ্য সহযোগীতায়
কোন মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদান। পথ শিশুদের পুনর্বাসন করার জন্য এ
প্রকল্প হতে প্রাপ্ত বা বিনিয়োগকৃত অর্থ ব্যবহার করা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবারো স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এখানে উল্লেখ করা
প্রয়োজন যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ৪৮ তম বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস
উদযাপন উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিকট আয়োজক ডিপিওর প্রস্তাব ছিল
যেমন (১) সাদাছড়ি এ্যাক্ট প্রণয়ন অনুমোদন সহ কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণ, (২)
প্রতিবন্ধীতা বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন নীতিমালা জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা ও দলিল
যথাযথ ভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, (৩) প্রতিবন্ধীতা বিষয়ক
পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, (৪) জাতীয় সংসদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১৫ টি আসন
সংরক্ষন রাখা, ৫। জাতীয় বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বসংগঠন সমূহের জন্য নির্দিষ্ট
পরিমাণ অর্থ বরাদ্ধ রাখা, (৬) বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত দৃষ্টি
প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সহ প্রয়োজনীয় বই পত্র ও
সরঞ্জামাদি বিনা মূল্যে সরবরাহ করা এবং তাদের জন্য উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা, (৭)
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বগসংগঠন সমূহের জন্য রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া, বৈদেশিক অনুদানের অর্থ ছাড় সহ সকল ব্যবস্থাদি সহজতর করা।
আমি উক্ত প্রস্তাব সমূহের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্তি করি। কিন্তু পাশাপাশি ডিপিওদের
এটা মনে রাখা দরকার যে শুধু পৃথক মন্ত্রণালয় হলে বা সংরক্ষিত সংসদ সদস্য পদে
প্রতিবন্ধী আসন থাকলেও কোন আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হবে না যদি কমুনিটি থেকে তৃণমূল
থেকে যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। ইউ.এন.সি.আর.পি.ডি এর চাইতে অনেক অনেক
বড় কর্মসূচী এবং ব্যবস্থা। অথচ প্রতিবন্ধী কমুনিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে
অগ্রসর হতে পারছেনা। যেমন সরকারের প্রধান বা প্রেসিডেন্ট নারী হলেই নারীদের সমস্যা
নিরসন হয়ে যাবেনা। যতক্ষণ না তারা শালীন পোষাক পরে, নারী নিযাতনের সকল ঘটনার বিচারে আইনের বাস্তবায়ন হয় এবং নারীরা পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন হয়-
ততক্ষণ এটা কমবেনা। তাই সংসদে প্রতিবন্ধীরা আসন পেলে ভাল, না পেলে হা হুতাশ করার কিছু নেই। কিছু নিজেদের সেলফ হেলফ
করতে হবে।
প্রতিবন্ধীদেরকে সহজে অনেকে সংক্ষেপে বলার জন্য বা বিদ্রুপাত্তক ভাবে কানা খোঁড়া লেংডা ইত্যাদি ডাকে। কিন্তু একটু বেশী শব্দ ব্যবহার করা দরকার হলেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শারিরীক প্রতিবন্ধী ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করার জন্য আমরা রিকোয়েস্ট করবো। কিন্তু নামে বা শব্দে কিছু আসে যায়না। আমি মনে করি এটা সামাজিক শিষ্টাচার, মানবজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান। মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ কারণ অপ্রতিবন্ধীদেরকে পূর্নাঙ্গ শারিরিক কাঠামো দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কেউ প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মে। আবার স্বাভাবিক কেউ প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। তখন সে যেন সম্মান পেতে পারে।
ডিজেবল্ড ব্যক্তিদের সংখ্যা বা পরিসংখ্যান ১০% বা ২০% যাই হোক তা খুব
গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমার অনুমান অন্তত ৫% কে আনতে হবে ডিপিওদের আওতায়। অন্তত এই
জনগোষ্ঠির বিষয়ে সকল ডিপিও ও সরকার রিসপনসিবল। প্রতিবন্ধী কমুনিটির অনেকে বেশ স্বচ্ছল, কেউ
উচ্চ শিক্ষিত, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী। তারা এখানে বেনিফিশিয়ারি হবে না অবশ্যই। তারা
পৃষ্ঠপোষক বা সহযোগী সদস্য হিসাবে থাকা উচিত।
ইনক্লুশান এন্ড সেলফ ডিফেন্ডেন্স অব পারসন্স উইথ ডিজেবলিটি। প্রতিবন্ধীদের
ইনক্লুশান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু যে পর্যন্ত না তা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত
বিশেষ সহযোগীতা প্রদান করতে হবে। যেমন একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ডাক্তারের
কাছে যখন যাবে তাকে যেন সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়। যখন তারা গাড়িতে উঠতে চাইবে, গাড়ী যেন দাঁড়ায়। পৃথিবীর অনেক দেশে এই বিষয়ে নাগরিকরা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেক
বেশী রিসপনসিবল। আবার প্রতিবন্ধীদের আসন দেওয়ার
বিষয়েও কোন নির্দিষ্টতা থাকা উচিত নয়। প্রতিবন্ধীরা হাত তুললেই পাবলিক বাস থামবে
এবং সিট ৯টা পুরন হয়ে যাওয়ার পর আরো প্রয়োজন হলেও তা স্বাভাবিক ব্যক্তিরা খালি করে
দেবেন। নারীদের ক্ষেত্রেও তাই। কারণ ৯টি সিট পুরন হওয়ার পর কোন নারী দাড়িয়ে থাকলে
অন্যদের সমস্যা হবে। এটা বৃদ্ধ ও শিশুদের ক্ষেত্রেও। যেহেতু ঝামেলা এড়ানোর জন্য বা
সময় বাঁচানোর জন্য বা বেশি যাত্রীর জন্য যদি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে /
প্রতিবন্ধীকে পাবলিক পরিবহন উঠতে না দেয়া বা না নেয় বা তাড়াহুড়ার কারণে তিনি উঠতে
না পারেন তবে তাকে ব্যক্তিগত গাড়ীতে ভাড়া যেতে হবে, এজন্য তাকে ভাতা দিতে হবে। যার বেশি প্রতিবন্ধীতা তাকে বেশি
ভাতা দিতে হবে- বিষয়টি তাও নয়। যার অক্ষমতা যত বেশি তাকে তত বেশি ভাতা দিতে হবে।
যেমন একজন আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তাকে ভাতা দিতে হবে। কিন্তু একজন পুরো
দৃষ্টিবন্ধী, যদি তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করে চাকুরী / ব্যবসা করছেন তাকে ভাতা দিতে
হবে না। অর্থাৎ ধনী প্রতিবন্ধীকে ভাতা দিতে হবে না। অন্তত ৯৯% প্রতিবন্ধী
ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান করা যায়, শুধু মাত্র
তাদেরকে কার্যপরিধি ও উপযুক্ত কর্মক্ষেত্রে সেট করে এবং সিস্টেম ডেভেলাপ করে। যেমন
কেয়া গ্রুপ সহ আরো কিছু কোম্পানী এগিয়ে আসছে। সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অথবা বাক
প্রতিবন্ধী অনেকেই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে বড় বড় দায়িত্বে রয়েছে শুধু যোগ্যতার
বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা পড়ছে, যোগ্যতার
স্বাক্ষর রাখছে, প্রতিবন্ধীতাকে জয় করে, অপ্রতিবন্ধীদের চাইতে এগিয়ে। তাই প্রতিবন্ধীরা
যারা শিক্ষা সহ অন্যান্য সুবিধার বাহিরে আছে তাদের উপাত্ত সংগ্রহ ও পরিল্পনা নিতে হবে। অর্থাৎ এভাবে উন্নয়ন
প্রক্রিয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকুরী, ব্যবসা সহ সকল কর্মকান্ডে ডিজেবল কমুনিটির
৯৯% সদস্য ইনক্লুড হতে পারবে। বাকী ১%
মাল্টিপল ডিজেবল ও স্বজন হীন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা। তাদের সবাইকে ভাতা দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সমূহকে বিশেষভাবে ডি.আর.এফ, গ্লোবাল ফান্ড ফর ডিজেবল্ড
ডেভেলাপমেন্ট সহ সবাইকে এই গাইড লাইন দেওয়া দরকার যেন তারা সমগ্র দেশের ডিজেবল
কমুনিটিকে স্ট্রেনদেন করার মত স্বচ্ছ ফান্ড দেয় এবং সরাসরি সুপারভাইজ করে। যেহেতু
তারা দিচ্ছে, তাহলে ইফেক্টিবলি
যেখানে প্রয়োজন সেখানে দিক, এখানে কোন লবিং বা সিন্ডিকেট দ্বারা প্রভাবিত হলে
তাদের আসল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে। অন্যদিকে ডিপিওদের সবসময় সরকারী, বেসরকারী, জাতীয়
বা আন্তর্জাতিক অথবা বিদেশী ফান্ড এর উপর ডিপেন্ডেন্ট হয়ে থাকা মোটেও ঠিক হবে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। মৈত্র শিল্প এর ভাল
দৃষ্টান্ত। অনুদানের কথা না ভেবে তৃণমূলে হস্তশিল্প, শিক্ষিতদের অনেকের জন্য
সফটওয়ার, প্রোগ্রামিং এর দিকে যেতে হবে। প্রতিবন্ধীরাই প্রতিবন্ধীদেরকে হেল্প করতে
পারে। সেল্প হেল্প। আর বিপন্ন অবস্থার দৃষ্টি কোণ থেকে অপ্রতিবন্ধীদেরকে সহযোগীতা
করতে হবে। অনেক স্বাভাবিক ব্যক্তি বা শিশু বা বৃদ্ধ বিপন্ন হয়ে আছে। তাদেরকেও এই
কমুনিটির সাথে যুক্ত করতে হবে। যাতে তারা প্রতিবন্ধীতার দিকে এগিয়ে না যায়।
বিবেচনা না করেই এটা বলা যাবে না যে ডিপিওদের ক্যাপাসিটি নাই। কিভাবে এত লোককে
ইনক্লুশান করবো। ক্যাপাসিটি সৃষ্টি হবে, যদি তারা প্রপারলি অগ্রসর হয়। এটাই ভিশন
হওয়া উচিৎ ডিজেবল্ড এলায়েন্স বা কোয়ালিশনের। তাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যেন শত ভাগ
ডিজেবল্ড ও বিপন্ন মানুষ সংস্থা সমূহের নেটওয়ার্ক বা সেবার আওতায় আসে। সবার হিসাবই স্বচ্ছ
হওয়া দরকার। এনজিও, সরকারী, বেসরকারী। চেষ্টা করা দরকার আয় ব্যয় যেন অনলাইনে প্রদর্শন
করার ব্যবস্থা থাকে। তাহলে একটি এনজিও হোক বা প্রতিবন্ধী সংস্থা হোক সহজেই
দুর্নীতি গ্রস্থ হতে পারবেনা। এছাড়া শিশুরা থাকবে বিশেষ কেয়ারে। ইউনিসেফ বা সেইভ
দা চিলড্রেন যেন ইফেক্টভলি কাজ করতে পারে তাদেরকে সহযোগীতা ও প্রবলেম আইডেন্টিফাই
করে দিতে হবে। জাতিসংঘ আর কিছু করতে না পারুক কিন্তু জাতিসংঘ যে সি.আর.পি.ডি করেছে
অনেক ধন্যবাদ তাকে। আবার যেসব দেশ সমূহের রাষ্ট্র
প্রধানরা এখানে সাইন করেছে- তাদেরকে ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। এখানে ১২৫-১৩০ টা
রাষ্ট্র হবে হয়তো। বাকী রাষ্ট্রগুলোকে এটা অনুমোদন করবে এ আশায় থাকবো। লিডারদের সি.আর.পি.ডি সম্পর্কে খুব ভাল ধারনা থাকা দরকার। প্রতিবন্ধী
কমুনিটির অনেকেরই তা নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে সি.আর.পি.ডি ইনক্লুড করা
প্রয়োজন। ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে পেপারস তৈরী করতে হবে মাঠ পর্যায় থেকে পাওয়া
সরাসরি তথ্য ও চাহিদার ভিত্তিতে, টেবিলে বসে
নয়। এভাবে অনেক কাজ, প্রতিবন্ধী ও বিপন্ন মানুষদেরকে যথাযথ অবস্থানে যেতে হলে অনেক
কাজ করতে হবে। অনেক আন্তরিকতা থাকতে হবে। প্রত্যেক ডিজেবল্ড সংস্থার কমিটিকে এবং
ডিজেবল্ড নেটওয়ার্ককে একাজে নিরলস ও নিরন্তর কাজ করতে হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা
ব্রেইল পদ্ধতি বিভিন্ন বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে
তাদের সবার খোঁজখবর নিতে হবে। তারা কাজ করছে কম্পিউটার নিয়ে। তারা রিসার্চ করছে
বিভিন্ন থিসিস নিয়ে। যারা ডিপিও সমূহের সদস্য নয় তাদেরকেও সহযোগীতা করতে হবে যাতে
তারা দেশের ডেভেলাপমেন্ট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। অন্য সকলের জন্য র্যাম্প, লিফট আছে কিনা
দেখতে হবে। বিশেষ যানবাহন চালু করার ব্যবস্থা করতে
হবে, না হলে স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক অনুদান বা
সিস্টেম দিতে হবে। যেমন রাস্তায় ট্রাফিক বা গেটের গ্যাট ম্যান তাদেরকে সম্পৃক্ত
করতে হবে। যে কোন প্রপার ওয়েতে ব্যক্তি, সমাজ বা সিস্টেমকে প্রতিবন্ধী বান্ধব করতে হবে।
প্রতিবন্ধীরা দাবা খেলছে, এমনকি ক্রিকেটও।
তাদের কথা মিডিয়া আনতে হবে, অন্য প্রতিবন্ধীদের
জানতে দিতে হবে, যাতে তারা ডিপেন্ডেন্ট
হয়ে না থাকে। যাতে তাদের ইনক্লুশন হয়।
মন্তব্যসমূহ
সচেতন হওয়া প্রয়োজন,
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন