 |
From Cht to Voice of bangladesh |
চার বোন। উম্মে হাবিবা চৌধুরী (৩৩), উম্মে সালমা চৌধুরী (৩০), উম্মে
তাসলিমা চৌধুরী (২৭) এবং উম্মে তানজিলা চৌধুরী (২৩)। চারজনই জন্ম থেকে
অন্ধ।
দৃষ্টিশক্তি নিয়ে জন্ম নিতে না পারলেও চার বোনের জীবন থেমে
যায়নি। প্রত্যেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন-নিচ্ছেন
উচ্চশিক্ষা। হাবিবা, তাসলিমা এবং তানজিলা-তিন বোন সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। গান, কম্পিউটার-পর্দা স্পর্শ মোবাইল চালানো,
মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরি থেকে রান্নাবান্না পর্যন্ত করে চার বোন নিজেরাই
নিজেদের গড়ে তুলেছেন সম্পদ হিসেবে।
চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগ এলাকার
বাসিন্দা ব্যবসায়ী
মো.নাছির
উদ্দিন চৌধুরী
এবং শামীমা
আক্তার চৌধুরীর
চার মেয়ে,
এক ছেলে। ছেলের
দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকলেও চার মেয়েই
জন্মান্ধ।
তাদের বাড়ি
পটিয়ার কচুয়াই
উপজেলার আজিমপুর
গ্রামে।
মন্তব্য
হাবিবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন অনুষদে মাস্টার্স করে এখন পটিয়া পৌরসভায় শশাংকমালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা।
তাসলিমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স করে এখন পটিয়া পৌরসভায় দক্ষিণ গোবিন্দরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা।
তানজিলা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী। তিনি পটিয়া পৌরসভার মোহছেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর তিন বোন পটিয়া পৌরসভার তিনটি সরকারি স্কুলে যোগ দেন।
মেঝ বোন সালমাও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন। তিনি বিসিএস দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ছোট বোন তানজিলা।
তাদের একমাত্র বড় ভাই মো.নাইম উদ্দিন আর্ন্তজাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ-এমবিএ করেছেন। তিনি বর্তমানে বায়িং হাউজে চাকরি করছেন।
মোহছেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে , প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীতে ৫০-৬০ জন মুখে সদ্য বোল ফোটা শিশুর সামনে দাঁড়িয়ে গল্প বলছেন তানজিলা। পাশে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে আছেন এক পুরুষ শিক্ষক। তিনি মূলত তানজিলাকে সহযোগিতা করছিলেন। তানজিলার পাঠদানের ভঙ্গি, কথা বলা-কিছুতেই বোঝা যাচ্ছিল না তিনি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
দীবা বড়ুয়া ও হুমায়রা বিনতে খলিল নামে দুই খুদে শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বাংলানিউজকে বলেন, ‘টিচার আমাদের অ, আ, ক, খ পড়ায়, ছড়া পড়ায়। টিচার খুব ভালো। আমাদের গান শেখায়, ব্যায়াম শেখায়। টিচার খুব আদর করে। ’
প্রাক প্রাথমিক, তৃতীয় শ্রেণী, চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাস নেন তানজিলা। মাঝে মাঝে পঞ্চম শ্রেণীতেও পড়ান।
মোহছেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজমুন নাহার বলেন, শিশুরা একটু চঞ্চল আর দুষ্টু হয়। সেজন্য তানজিলাকে সহযোগিতা করতে একজন টিচার দিই। না হলে, ওর পড়ালেখার ধরন খুব ভাল। ছাত্রছাত্রীরাও তাকে খুব পছন্দ করে। আমরা সহকর্মীদেরও সে খুবই প্রিয়। দৃষ্টিশক্তি আছেন এমন একজন টিচারের কাছ থেকে আমি যে কাজ পাই, তানজিলাও আমাকে সমান সাপোর্ট দেয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলতি বছর মাস্টার্স পরীক্ষা দেবেন তানজিলা। ছাত্রজীবনে গান শিখেছেন। স্কুলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি গানও শেখান তানজিলা। ক্যাম্পাসে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা উদীচীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু পটিয়ায় উদীচীর কর্মকাণ্ড না থাকায় চারণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তানজিলা।
‘আমি সংস্কৃতিকে ভালবাসি, গানকে ভালবাসি। আমি সংস্কৃতির সঙ্গে থাকতে চাই। সেজন্য উদীচী-চারণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমার মন খারাপ হলে আমি এ লড়াই বাঁচার লড়াই-গানটি গাই। এতে আমি মনের জোর পাই। লড়াই করার শক্তি পাই। ’ বলেন তানজিলা।
তানজিলাকে গত ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে পুরস্কৃত করেন শেখ হাসিনা। এসময় টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও উপস্থিত ছিলেন। ভবিষ্যতে শিক্ষা ক্যাডারে বিসিএস দেয়ার পাশাপাশি একটি গানের স্কুল করার আকাঙ্খার কথা জানিয়েছেন সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগে থাকা তানজিলা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন